পরিচিতিঃ
যে তত্ত্বের সাহায্যে কঠিন পদার্থের তড়িৎ পরিবহন ধর্ম বর্ণনা করা হয় তাকে ব্যান্ড তত্ত্ব বলা হয়।
বর্ণনাঃ
সকল পদার্থই অসংখ্য ক্ষুদ্র পরমাণু দ্বারা গঠিত। পরমাণুসমূহের কেন্দ্রে থাকে ধণাত্বক চার্জিত নিউক্লিয়াস। নিউক্লিয়াসকে বেষ্টন করে ঋণাত্ব চার্জিত ইলেকট্রনসমূহ পরিভ্রমন করে। ইলেকট্রনসমূহ নির্দিষ্ট অনুমোদিত কক্ষে ঘর্ণায়মান, এই নির্দিষ্ট কক্ষের শক্তি নির্দিষ্ট থাকে। নিউক্লিয়াসের নিকটবর্তী শক্তিস্তরের ইলেকট্রনসমূহের শক্তি কম এবং সর্ববহিস্থ স্তরের ইলেকট্রনসমূহের শক্তি সবচে বেশী। কোন কক্ষের ইলেকট্রনকে তার পরবর্তি বহিস্থ কক্ষে আনতে হলে উক্ত ইলেকট্রনকে নির্দিষ্ট পরিমান শক্তি সরবরাহ করতে হবে। এই ইলেকট্রনটি যখন আবার পূর্বের কক্ষে ফিরে আসবে তখন গৃহীত শক্তি তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণের মাধ্যমে ফিরিয়ে দিবে।
প্রতিটি মুক্ত পরমাণুর নির্দিষ্ট শক্তি স্তর থাকে, যেখানে ইলেকট্রনসমূহ থাকতে পারে। শক্তিস্তরগুলির মধ্যবর্তী স্থানে কোন ইলেকট্রন থাকতে পারে না। কিন্তু এই মুক্ত পরমাণুগুলো যখন একত্রে কেলাস গঠন করে তখন ইলেকট্রনসমূহের কক্ষপথ ঐ পরমাণুর নিজস্ব চার্জ দ্বারা এবং পার্শ্ববর্তী অন্যান্য পরমাণুর ইলেকট্রন ও নিউক্লিয়াসের চার্জ দ্বারা প্রভাবিত হয়। একারণে দেখা যায় পরমাণুসমূহের অন্তর্গত ইলেকট্রনসমূহের নিজস্ব কক্ষপথ খুব সামান্য হলেও ভিন্ন ভিন্ন হয়। অর্থাত একই শক্তিস্তরের অন্তর্গত ইলেকট্রনসমূহের কক্ষপথ খুব সামান্য হলেও পার্থক্য হয়। একটি কেলাসে যেহেতু লক্ষ লক্ষ প্রথম স্তর ইলেকট্রন রয়েছে সেহেতু প্রতিটি ইলেকট্রনের সামান্য পার্থক্য বিশিষ্ট কক্ষপথগুলি মিলে একটি এনার্জি ব্যান্ড তৈরী করে। এভাবে অন্যান্য স্তরের ইলেকট্রনসমূহের কক্ষপথগুলি মিলে ভিন্ন ভিন্ন ব্যান্ড তৈরী করে। মোটকথা, একটি নিঃসঙ্গ পরমাণুর সুনির্দিষ্ট শক্তিস্তর থাকে কিন্তু লক্ষ লক্ষ পরমাণু দ্বারা গঠিত কেলাসে শক্তি ব্যান্ড তৈরী হয়। শক্তি ব্যান্ডগুলির মধ্যে শক্তির ব্যবধান কত তার উপর ভিত্তি করে পদার্থকে পরিবাহী, অর্ধপরিবাহী, অপরিবাহী ইত্যাদি বিবেচনা করা হয়।
যোজন ব্যান্ড (Valence Band):
যোজন ইলেকট্রনসমূহ যে শক্তি পাল্লার মধ্যে (Energy Range) অবস্থান করে তাকে যোজন ব্যান্ড বলে। যোজন ব্যান্ড আংশিক ভাবে বা সম্পূর্ন ভাবে ইলেকট্রন দ্বারা পূর্ণ হতে পারে। নিষ্ক্রিয় গ্যাসের যোজন ব্যান্ড সম্পূর্ণ ভাবে ইলেকট্রন দ্বারা পূর্ণ থাকে। যোজন ব্যান্ডে অবস্থিত ইলেকট্রসমূহকে যোজ্যতা ইলেকট্রন বলে।
পরিবহন ব্যান্ড (Conduction Band):
যোজন ব্যান্ডের বহিস্থ শক্তি ব্যান্ডকে পরিবহন ব্যান্ড বলে। এই ব্যান্ডে অবস্থিত ইলেকট্রনগুলি প্রায় মুক্ত এবং তড়িৎ প্রবাহে অংশ গ্রহণ করে।
নিষিদ্ধ ব্যান্ড (Forbidden Band):
যোজন ব্যান্ড ও পরিবহন ব্যান্ডের মধ্যবর্তী স্থানে কোনে ইলেকট্রন থাকে না। এই অঞ্চলকে নিষিদ্ধ ব্যান্ড বলা হয়। এর মান বিভিন্ন পদার্থের জন্য বিভিন্ন হয়ে থাকে।
পরিবাহীঃ
যে সকল পদার্থে যথেষ্ট পরিমান মুক্ত ইলেকট্রন থাকে এবং যে সকল পদার্থের মধ্য দিয়ে সহজে তড়িৎ প্রবাহিত হতে পারে তাদেরকে কন্ডাকটর বা পরিবাহী পদার্থ বলে। যেমন রূপা, তামা, এলুমিনিয়াম ইত্যাদি। পরিবাহী পদার্থের যোজন ব্যান্ডে সাধারণতঃ ৪টির কম ইলেকট্রন থাকে। কন্ডাকটরের পরিবহন ব্যান্ড ও যোজন ব্যান্ডের মধ্যে কোন শক্তি পার্থক্য (Energy Gap) থাকে না, বরং এই দুটি ব্যান্ড উপরিপাতিত অবস্থায় থাকে। ফলে খুব সামান্য পরিমান বিভব পার্থক্য প্রয়োগের ফলে তড়িৎ প্রবাহ ঘটে।
অর্ধপরিবাহীঃ
যে সব পদার্থের তড়িৎ পরিবাহীতা কন্ডাকটরের তুলনায় কম কিন্তু অন্তরক হতে বেশী তাদেরকে অর্ধ পরিবাহী পদার্থ বলে। অর্ধ পরিবাহী পদার্থের যোজন ব্যান্ডে সাধারণতঃ ৪টি ইলেকট্রন থাকে। যেমনঃ জার্মেনিয়াম, সিলিকন ইত্যাদি। অর্ধপরিবাহী পদার্থের যোজন ব্যান্ড ও পরিবহন ব্যান্ডের মধ্যে সামান্য শক্তি ব্যবধান থাকে যা প্রায় ১ ইলেকট্রন-ভোল্টের (1eV) সমান। সেমিকন্ডাকটরের পরিবহন ব্যান্ড প্রায় খালি থাকে। পরম শূণ্য তাপমাত্রায় সেমিকন্ডাকটর অপরিবাহীর ন্যয় আচরণ করে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে কন্ডাকশন ব্যান্ডে ইলেকট্রনের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় ও সেমিকন্ডাকটরের তড়িৎ পরিবাহীতা বৃদ্ধি পায়। উপযুক্ত ভেজাল দ্রব্য মিশিয়ে অর্ধপরিবাহীর তড়িৎ পরিবাহীতা বৃদ্ধি করা যায়।
অপরিবাহীঃ
যে সকল পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হতে পারে না তাদেরকে অপরিবাহী বলে। যেমন কাঁচ, রবার চিনামাটি ইত্যাদি। অপরিবাহীর পরিবহন ব্যান্ড সম্পূর্ণ খালি থাকে। যোজন ব্যান্ড ও পরিবহন ব্যান্ডের মধ্যবর্তী শক্তি ব্যবধান খুব বেশী থাকে তা সাধারনতঃ প্রায় ৭ ইলেকট্রন-ভোল্টের (7eV) সমান, ফলে যোজন ব্যান্ড হতে ইলেকট্রন পরিবহন ব্যান্ডে আনতে উচ্চ শক্তির প্রয়োজন। কক্ষ তাপমাত্রায় যোজন ইলেকট্রনসমূহ এই ব্যবধান অতিক্রম করতে পারে না, তাই এর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ চলে না।
সূত্রঃ
উচ্চ মাধ্যমিক পদার্থ বিজ্ঞান
No comments:
Post a Comment