Sunday, May 8, 2016

রেজিস্টরের মান নির্ধারণী পদ্ধতি

ভূমিকাঃ

রেজিস্টর ইলেকট্রনিক প্রযুক্তির সবচে বহুল ব্যবহৃত কম্পোনেন্ট। কোন প্রজেক্ট তৈরীতে এই কম্পোনেন্টটি বেশী ব্যবহার হয়। রেজিস্টরের ধরণ অনুযায়ী এর মান লিপিবদ্ধ করার পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। এই পাঠে আমরা রেজিস্টরের মান লিপিবদ্ধ করা ও তা পড়ার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবো।

মান লিপিবদ্ধ করার বিভিন্ন পদ্ধতিঃ

রেজিস্টরের মানকে লিপিবদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। রেজিস্টরের আকার প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহন করা হয়। সাধারণতঃ রেজিস্টরের আকার বড় হলে ডেসিম্যাল সংখ্যার মাধ্যমে মান লিখে প্রকাশ করা হয়। ক্ষুদ্রাকৃতির রেজিস্টর যেমন কর্বন কম্পোজিশন রেজিস্টর, কার্বন ফিল্ম রেজিস্টর ইত্যাদির ক্ষেত্রে রঙ্গীন কোড ব্যবহার করে মান লিপিবদ্ধ করা হয়। নিচে রেজিস্টরের মান লিপিবদ্ধ করার কয়েকটি প্রচলিত পদ্ধতি দেখানো হলোঃ

১।      কালার কোডিং পদ্ধতি
২।      ডেসিম্যাল নাম্বার পদ্ধতি
৩।      চীপ রেজিস্টর কোডিং বা নাম্বার কোডিং পদ্ধতি
নিম্নে পদ্ধতিগুলো যথাসম্ভব বিস্তারিত আলোচিত হলো।

১।      কালার কোডিং পদ্ধতিঃ

1 (450 x 256)এই পদ্ধতিতে রেজিস্টরের গায়ে ভিন্ন ভিন্ন রঙ্গের কতকগুলি কোড (Strip) প্রিন্ট করা থাকে, এগুলিকে কালার ব্যান্ড বা কালার কোড বলা হয়। প্রত্যেক রঙ্গের জন্য একটি করে মান নির্দিষ্ট করা আছে। পাশাপাশি অবস্থিত কোডসমূহ মিলে বিশেষ নিয়মে একটি মান প্রকাশ করে যা দ্বারা ঐ রেজিস্টরের ওহমিক মান উপস্থাপিত হয়। রেজিস্টরের মান প্রকাশের এই পদ্ধতিকে কালার কোডিং পদ্ধতি বলা হয়। কালার কোডিং পদ্ধতিটি আবার কয়েক ধরণের হয়ে থাকে।
            ক)       ৪ ব্যান্ড পদ্ধতি
খ)        ৫ ব্যান্ড পদ্ধতি
সকল প্রকার কোডিং পদ্ধতিতে কালার কোড সমূহের মান অভিন্ন। নিম্নের ছকে এই কালার সমূহের মান উল্লেখ করা হলোঃ
2

ক)     ৪ ব্যান্ড পদ্ধতিঃ

3৪ ব্যান্ড পদ্ধতিতে মোট ৪টি ব্যান্ড থাকে। প্রথম দুটি ব্যান্ড ওহমিক মানের প্রথম দুই ডিজিট প্রকাশ করে। তৃতীয় ব্যান্ড গুণক রাশি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ৪র্থ ব্যান্ডটি রেজিস্টরের টলারেন্স মানের জন্য নির্ধারিত।
প্রথম দুটি ব্যান্ডের মান পর্যায়ক্রমে বসিয়ে প্রাপ্ত সংখ্যাকে গুণক রাশির মান দ্বারা গুণ করলে রেজিস্টরের ওহমিক মান পাওয়া যায়। চিত্রের উদাহরণটি লক্ষ করি – এখানে প্রথম ব্যান্ড হলুদ, এর মান ৪ এবং ২য় ব্যান্ড বেগুনী এর মান ৭ পর্যায়ক্রমে বসিয়ে পেলাম ৪৭, এবার ৩য় ব্যান্ডের লাল রঙের জন্য গুণক রাশির মান ১০ তাই ৪৭ সংখ্যাটিকে গুণক রাশির মান দ্বারা গুণ করে পাই ৪৭x১০ = ৪৭০০। একক অবশ্যই ওহম। ৪র্থ ব্যান্ডে রয়েছে রূপালী রং যার টলারেন্স মান ±১০%। সুতরাং রেজিস্টরের সর্বোচ্চ মান হবে ৪৭০০+৪৭০০x১০/১০০ = ৫১৭০ ওহম এবং সর্বনিম্নমান হবে ৪৭০০–৪৭০০x১০/১০০ = ৪২৩০ ওহম। অর্থাত রেজিস্টরটির মান ৪২৩০ হতে ৫১৭০ ওহমের মধ্যে যে কোন মান হতে পারে।
উল্লেখ্য যে ১০ ওহমের কম মানের রেজিস্ট্যান্স প্রকাশের জন্য তৃতীয়/গুণক ব্যান্ডে সোনালী অথবা রূপালী রং ব্যবহৃত হয়।

খ)      ৫ ব্যান্ড পদ্ধতিঃ

4৪ ব্যান্ড পদ্ধতির একটি বড় সীমাবদ্ধতা হলো এই পদ্ধতিতে অতি সূক্ষ ওহমিক মানগুলি প্রকাশ করা যায় না। যেমন কোন রেজিস্টরের মান ৬.৮৫ ওহম। এই মানটি প্রকাশের জন্য ৪ ব্যান্ড পদ্ধতি উপযুক্ত নয়। ৪ ব্যান্ড পদ্ধতিতে এক দশমিক স্থান পর্যন্ত খন্ডিত মান প্রকাশ করা যায়, কিন্তু দুই দশমিক স্থান পর্যন্ত খন্ডিত মান প্রকাশ করা যায় না। এ জন্য ৫ ব্যান্ড পদ্ধতির প্রচলন হয়েছে। এই পদ্ধতিতে দুই দশমিক স্থান পর্যন্ত ওহমিক মান প্রকাশ করা যায়। তাই বলা যায় ৫ ব্যান্ড পদ্ধতিতে ৪ব্যান্ড পদ্ধতির তুলনায় ১০ গুণ সূক্ষ ওহমিক মান উপস্থাপন করা যায়।
৫ ব্যান্ড পদ্ধতিতে প্রথম তিনটি ব্যান্ড রেজিস্টরের ওহমিক মানের প্রথম তিনটি ডিজিট উপস্থাপন করে। চতুর্থ ব্যান্ডটি গুণক রাশি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এবং ৫ম ব্যান্ডটি টলারেন্স মান প্রকাশ করে।
প্রথম ৩টি ব্যান্ডের মান পর্যায়ক্রমে বসিয়ে প্রাপ্ত সংখ্যাকে গুণক রাশির মান দ্বারা গুণ করলে রেজিস্টরের ওহমিক মান পাওয়া যায়। চিত্রের উদাহরণটি লক্ষ করি – এখানে প্রথম ব্যান্ড নীল, এর মান ৬ এবং ২য় ব্যান্ড ধূসর এর মান ৮, তৃতীয় ব্যান্ডের কালো রঙের জন্য ০ পর্যায়ক্রমে বসিয়ে পেলাম ৬৮০, এবার চতুর্থ ব্যান্ডে লাল রঙের জন্য গুণক রাশির মান ১০তাই ৬৮০ সংখ্যাটিকে গুণক রাশির মান দ্বারা গুণ করে পাই ৬৮০x১০ = ৬৮০০০। একক অবশ্যই ওহম। ৫ম ব্যান্ডে রয়েছে সোনালী রং যার টলারেন্স মান ±৫%, অর্থাত মূল ওহমিক মানের ±৫% টলারেন্স নির্ধারণ করতে হবে। সুতরাং রেজিস্টরের সর্বোচ্চ মান হবে ৬৮০০০+৬৮০০০x১০/১০০ = ৭৪৮০০ ওহম এবং সর্বনিম্নমান হবে ৪৭০০–৪৭০০x১০/১০০ = ৬১২০০ ওহম। অর্থাত রেজিস্টরটির মান ৭৪৮০০ হতে ৬১২০০ ওহমের মধ্যে যে কোন মান হতে পারে।
উল্লেখ্য যে ১০ ওহমের কম মানের রেজিস্ট্যান্স প্রকাশের জন্য চতুর্থ/গুণক ব্যান্ডে সোনালী অথবা রূপালী রং ব্যবহৃত হয়।
নোটঃ উপরের ছকে কালারসমূহের জন্য নির্ধারিত মান দেখানো হয়েছে। সকল পদ্ধতিতে প্রথম ব্যান্ডে কালো, সোনালী, রূপালী রঙসমূহ কখনোই ব্যবহার হয় না। সকল পদ্ধতিতে দ্বিতীয় ব্যান্ডে সোনালী ও রূপালী রঙসমূহ কখনোই ব্যবহার হয় না। ৫ ব্যান্ড পদ্ধতিতে তৃতীয় ব্যান্ডে সোনালী ও রূপালী রঙসমূহ ব্যবহার হয় না। ৪ ব্যান্ড পদ্ধতিতে ৪র্থ ব্যান্ডে শুধু সোনালী ও রূপালী রং ব্যবহৃত হয় অন্য কোন রং ব্যবহৃত হয় না। ৫ ব্যান্ড পদ্ধতিতে ৫ম ব্যান্ডে কালো, কমলা, হলুদ, ধুসর, সাদা রং ব্যবহৃত হয় না। উল্লেখিত নিষেধাজ্ঞা ব্যতিত সকল ব্যান্ডে সকল রং সমূহ ব্যবহৃত হতে পারে।
বিষয়টি একটি ছকের মাধ্যমে বুঝার চেষ্টা করি।
5X’ – এর অর্থ ব্যবহৃত হয় না, ‘’ – অর্থ ব্যবহৃত হয়।

প্রথম ব্যান্ডটি নির্ধারণের কৌশলঃ

ছাত্র ছাত্রীরা এই বিষয়টি প্রায়ই ভুল করে। প্রথম ব্যান্ড নির্ধারণ করতে গিয়ে শেষ ব্যান্ডকে ১ম ব্যান্ড মনে করে। এই বিভ্রান্তি দুর করার জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে।
6১ম কৌশলঃ আমরা জানি প্রথম ব্যান্ডে কখনোই কালো, সোনালী, রূপালী এই রংগুলি ব্যবহার হয় না। তাই এই রংগুলি রেজিস্টরের প্রান্তীয় ব্যান্ডে পাওয়া গেলে সেটি হবে শেষ ব্যান্ড এবং তার বিপরীত প্রান্তীয় ব্যান্ডটি হবে প্রথম ব্যান্ড।
২য় কৌশলঃ ১ম ব্যান্ড প্রান্ত হতে নিকটবর্তী হয় এবং শেষ ব্যান্ডটি তার প্রান্ত হতে দূরবর্তী হয়। এক্ষেত্রে যে প্রান্তীয় ব্যান্ডটি প্রান্ত হতে বেশী নিকটবর্তী তা-ই প্রথম ব্যান্ড হিসাবে বিবেচিত। বিষয়টি একটি চিত্রের মাধ্যমে বুঝি।
প্রথম ব্যান্ডকে সর্ববামে রেখে রেজিস্টরটি ধরলে পর্যায়ক্রমে ডান দিকে ২য়, ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম ব্যান্ড নির্ধারিত হবে।
7শূণ্য (০) ওহম রেজিস্টরঃ আপনারা বিশ্বাস করুন অথবা না করুন। বাস্তবে শূণ্য ওহম রেজিস্টর রয়েছে। এই রেজিস্টরের বডিতে শুধুমাত্র একটি মোটা কালো রঙের ব্যান্ড দ্বারা এর মান প্রকাশ করা হয়। বাস্তবে এর কোন প্রয়োজনীয়তা নেই মনে হয়, কিন্তু প্রকৃত পক্ষে প্রয়োজন আছে। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ইন্ডাস্ট্রিতে যেখানে পিসিবিতে কম্পোনেন্ট সোল্ডারিং করার জন্য অটোমেশন সিস্টেম বা রোবট ব্যবহার করা হয়, এই রোবটগুলি জাম্পার ওয়্যার সোল্ডারিং করতে পারেনা কিন্তু রেজিস্টর সোল্ডারিং করতে পারে, কারণ ওয়্যার রেজিস্টরের তুলনায় বেশী সরু ও সূক্ষ। তাই এই রোবটগুলির কাজের সুবিধার্থে শূণ্য ওহম রেজিস্টর তৈরী করা হয়। এদের ওহমিক মান শূণ্যের খুব নিকটবর্তী।

২।      ডেসিম্যাল নাম্বার পদ্ধতিঃ

8সাধারণতঃ বড় আকৃতির ওয়্যারউন্ড রেজিস্টরের গায়ে রেজিস্টরের মান সংখ্যায় লিখে প্রকাশ করা হয়। কখনো কখনো ছোট আকৃতির ওয়্যারউন্ড রেজিস্টরের গায়ে কালার কোডিং পদ্ধতি ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। চিত্রে একটি ওয়্যার উন্ড রেজিস্টর দেখানো হয়েছে যাতে XICON এবং 7W100WJ লিখা রয়েছে। এখানে XICON  শব্দটি উৎপাদনকারী কোম্পানীর নিজস্ব কোড এবং 7W100WJ শব্দটি দ্বারা বুঝায় রেজিস্টরটির পাওয়ার রেটিং ৭ ওয়াট, এর ওহমিক মান ১০০ ওহম এবং টলারেন্স J অক্ষরের জন্য ±৫%। বিভিন্ন অক্ষরের জন্য টলারেন্সের মান নিচের টেবিলে উপস্থাপিত হলো।
TOLERANCE

৩।      চীপ রেজিস্টর কোডিং পদ্ধতিঃ

চীপ রেজিস্টরগুলি চ্যাপ্টাকৃতি কার্বন ফিল্ম রেজিস্টর। এগুলি ক্ষুদ্রাকৃতির হয় কারণ এগুলি সুক্ষ ইলেকট্রনিক সিস্টেম বিশেষ করে মাদারবোর্ড, র‌্যাম ইত্যাদি ডিভাইসে লাগানো হয়। তিনটি ডেসিম্যাল ডিজিট দ্বারা বিশেষ কোডিং পদ্ধতিতে এই রেজিস্টরগুলির মান প্রকাশ করা হয়। প্রথম ডিজিটে ১ থেকে ৯ এর মধ্যে যে কোন অংক হতে পারে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডিজিটে ০ থেকে ৯ এর মধ্যবর্তী যে কোন অংক হতে পারে। এর প্রথম দুটি ডিজিট ওহমিক মানের প্রথম দুটি অংক প্রকাশ করে। তৃতীয় ডিজিট গুণক রাশি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। চিত্র-ক তে চীপ রেজিস্টরের কোডিং দেখানো হয়েছে। চিত্র-খ তে প্রদর্শিত কোড ৫৬২ এর প্রথম দুটি ডিজিট নিয়ে প্রাপ্ত সংখ্যা ৫৬ কে গুণক রাশির মান ১০ দ্বারা গুণ করে পাই ৫৬০০। একক অবশ্যই ওহম। অনেক সময় খন্ডিত মান প্রকাশ করার জন্য দ্বিতীয় ডিজিটে একটি R লেখা হয়। চিত্র-গ তে প্রদর্শিত 5R6 এর অর্থ হলো ৫.৬ ওহম। এই হলো তিন ডিজিটের মাধ্যমে কোডিং পদ্ধতি।
9
যদি কোডে ৪ ডিজিট থাকে তাহলে প্রথম তিন ডিজিট ওহমিক মানের প্রথম তিনটি অংক প্রকাশ করবে এবং চতুর্থ ডিজিটটি গুণক রাশি হিসাবে ব্যবহৃত হবে। বাকী সকল নিয়ম একই।

শূণ্য ওহম চীপ রেজিস্টরঃ

চিত্র-ঘ তে শূণ্য ওহম চীপ রেজিস্টরের প্রতীক দেখানো হয়েছে। একটি H আকৃতির চিহ্ন দ্বারা শূণ্য ওহম চীপ রেজিস্টর বোঝানো হয়।

সূত্রঃ

উচ্চ মাধ্যমিক পদার্থ বিজ্ঞান ২য় পত্র
Basic Electronics Solid State – B. L. Theraja
Basic Electronics – Bernard Grob

No comments:

Post a Comment