ভূমিকাঃ
রেজিস্টর ইলেকট্রনিক প্রযুক্তির সবচে বহুল ব্যবহৃত কম্পোনেন্ট। কোন প্রজেক্ট তৈরীতে এই কম্পোনেন্টটি বেশী ব্যবহার হয়। রেজিস্টরের ধরণ অনুযায়ী এর মান লিপিবদ্ধ করার পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। এই পাঠে আমরা রেজিস্টরের মান লিপিবদ্ধ করা ও তা পড়ার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবো।
মান লিপিবদ্ধ করার বিভিন্ন পদ্ধতিঃ
রেজিস্টরের মানকে লিপিবদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। রেজিস্টরের আকার প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহন করা হয়। সাধারণতঃ রেজিস্টরের আকার বড় হলে ডেসিম্যাল সংখ্যার মাধ্যমে মান লিখে প্রকাশ করা হয়। ক্ষুদ্রাকৃতির রেজিস্টর যেমন কর্বন কম্পোজিশন রেজিস্টর, কার্বন ফিল্ম রেজিস্টর ইত্যাদির ক্ষেত্রে রঙ্গীন কোড ব্যবহার করে মান লিপিবদ্ধ করা হয়। নিচে রেজিস্টরের মান লিপিবদ্ধ করার কয়েকটি প্রচলিত পদ্ধতি দেখানো হলোঃ
১। কালার কোডিং পদ্ধতি
২। ডেসিম্যাল নাম্বার পদ্ধতি
৩। চীপ রেজিস্টর কোডিং বা নাম্বার কোডিং পদ্ধতি
২। ডেসিম্যাল নাম্বার পদ্ধতি
৩। চীপ রেজিস্টর কোডিং বা নাম্বার কোডিং পদ্ধতি
নিম্নে পদ্ধতিগুলো যথাসম্ভব বিস্তারিত আলোচিত হলো।
১। কালার কোডিং পদ্ধতিঃ

ক) ৪ ব্যান্ড পদ্ধতি
খ) ৫ ব্যান্ড পদ্ধতি
খ) ৫ ব্যান্ড পদ্ধতি
সকল প্রকার কোডিং পদ্ধতিতে কালার কোড সমূহের মান অভিন্ন। নিম্নের ছকে এই কালার সমূহের মান উল্লেখ করা হলোঃ
ক) ৪ ব্যান্ড পদ্ধতিঃ

প্রথম দুটি ব্যান্ডের মান পর্যায়ক্রমে বসিয়ে প্রাপ্ত সংখ্যাকে গুণক রাশির মান দ্বারা গুণ করলে রেজিস্টরের ওহমিক মান পাওয়া যায়। চিত্রের উদাহরণটি লক্ষ করি – এখানে প্রথম ব্যান্ড হলুদ, এর মান ৪ এবং ২য় ব্যান্ড বেগুনী এর মান ৭ পর্যায়ক্রমে বসিয়ে পেলাম ৪৭, এবার ৩য় ব্যান্ডের লাল রঙের জন্য গুণক রাশির মান ১০২ তাই ৪৭ সংখ্যাটিকে গুণক রাশির মান দ্বারা গুণ করে পাই ৪৭x১০২ = ৪৭০০। একক অবশ্যই ওহম। ৪র্থ ব্যান্ডে রয়েছে রূপালী রং যার টলারেন্স মান ±১০%। সুতরাং রেজিস্টরের সর্বোচ্চ মান হবে ৪৭০০+৪৭০০x১০/১০০ = ৫১৭০ ওহম এবং সর্বনিম্নমান হবে ৪৭০০–৪৭০০x১০/১০০ = ৪২৩০ ওহম। অর্থাত রেজিস্টরটির মান ৪২৩০ হতে ৫১৭০ ওহমের মধ্যে যে কোন মান হতে পারে।
উল্লেখ্য যে ১০ ওহমের কম মানের রেজিস্ট্যান্স প্রকাশের জন্য তৃতীয়/গুণক ব্যান্ডে সোনালী অথবা রূপালী রং ব্যবহৃত হয়।
খ) ৫ ব্যান্ড পদ্ধতিঃ

৫ ব্যান্ড পদ্ধতিতে প্রথম তিনটি ব্যান্ড রেজিস্টরের ওহমিক মানের প্রথম তিনটি ডিজিট উপস্থাপন করে। চতুর্থ ব্যান্ডটি গুণক রাশি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এবং ৫ম ব্যান্ডটি টলারেন্স মান প্রকাশ করে।
প্রথম ৩টি ব্যান্ডের মান পর্যায়ক্রমে বসিয়ে প্রাপ্ত সংখ্যাকে গুণক রাশির মান দ্বারা গুণ করলে রেজিস্টরের ওহমিক মান পাওয়া যায়। চিত্রের উদাহরণটি লক্ষ করি – এখানে প্রথম ব্যান্ড নীল, এর মান ৬ এবং ২য় ব্যান্ড ধূসর এর মান ৮, তৃতীয় ব্যান্ডের কালো রঙের জন্য ০ পর্যায়ক্রমে বসিয়ে পেলাম ৬৮০, এবার চতুর্থ ব্যান্ডে লাল রঙের জন্য গুণক রাশির মান ১০২তাই ৬৮০ সংখ্যাটিকে গুণক রাশির মান দ্বারা গুণ করে পাই ৬৮০x১০২ = ৬৮০০০। একক অবশ্যই ওহম। ৫ম ব্যান্ডে রয়েছে সোনালী রং যার টলারেন্স মান ±৫%, অর্থাত মূল ওহমিক মানের ±৫% টলারেন্স নির্ধারণ করতে হবে। সুতরাং রেজিস্টরের সর্বোচ্চ মান হবে ৬৮০০০+৬৮০০০x১০/১০০ = ৭৪৮০০ ওহম এবং সর্বনিম্নমান হবে ৪৭০০–৪৭০০x১০/১০০ = ৬১২০০ ওহম। অর্থাত রেজিস্টরটির মান ৭৪৮০০ হতে ৬১২০০ ওহমের মধ্যে যে কোন মান হতে পারে।
উল্লেখ্য যে ১০ ওহমের কম মানের রেজিস্ট্যান্স প্রকাশের জন্য চতুর্থ/গুণক ব্যান্ডে সোনালী অথবা রূপালী রং ব্যবহৃত হয়।
নোটঃ উপরের ছকে কালারসমূহের জন্য নির্ধারিত মান দেখানো হয়েছে। সকল পদ্ধতিতে প্রথম ব্যান্ডে কালো, সোনালী, রূপালী রঙসমূহ কখনোই ব্যবহার হয় না। সকল পদ্ধতিতে দ্বিতীয় ব্যান্ডে সোনালী ও রূপালী রঙসমূহ কখনোই ব্যবহার হয় না। ৫ ব্যান্ড পদ্ধতিতে তৃতীয় ব্যান্ডে সোনালী ও রূপালী রঙসমূহ ব্যবহার হয় না। ৪ ব্যান্ড পদ্ধতিতে ৪র্থ ব্যান্ডে শুধু সোনালী ও রূপালী রং ব্যবহৃত হয় অন্য কোন রং ব্যবহৃত হয় না। ৫ ব্যান্ড পদ্ধতিতে ৫ম ব্যান্ডে কালো, কমলা, হলুদ, ধুসর, সাদা রং ব্যবহৃত হয় না। উল্লেখিত নিষেধাজ্ঞা ব্যতিত সকল ব্যান্ডে সকল রং সমূহ ব্যবহৃত হতে পারে।
বিষয়টি একটি ছকের মাধ্যমে বুঝার চেষ্টা করি।
প্রথম ব্যান্ডটি নির্ধারণের কৌশলঃ
ছাত্র ছাত্রীরা এই বিষয়টি প্রায়ই ভুল করে। প্রথম ব্যান্ড নির্ধারণ করতে গিয়ে শেষ ব্যান্ডকে ১ম ব্যান্ড মনে করে। এই বিভ্রান্তি দুর করার জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে।

২য় কৌশলঃ ১ম ব্যান্ড প্রান্ত হতে নিকটবর্তী হয় এবং শেষ ব্যান্ডটি তার প্রান্ত হতে দূরবর্তী হয়। এক্ষেত্রে যে প্রান্তীয় ব্যান্ডটি প্রান্ত হতে বেশী নিকটবর্তী তা-ই প্রথম ব্যান্ড হিসাবে বিবেচিত। বিষয়টি একটি চিত্রের মাধ্যমে বুঝি।
প্রথম ব্যান্ডকে সর্ববামে রেখে রেজিস্টরটি ধরলে পর্যায়ক্রমে ডান দিকে ২য়, ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম ব্যান্ড নির্ধারিত হবে।

২। ডেসিম্যাল নাম্বার পদ্ধতিঃ

৩। চীপ রেজিস্টর কোডিং পদ্ধতিঃ
চীপ রেজিস্টরগুলি চ্যাপ্টাকৃতি কার্বন ফিল্ম রেজিস্টর। এগুলি ক্ষুদ্রাকৃতির হয় কারণ এগুলি সুক্ষ ইলেকট্রনিক সিস্টেম বিশেষ করে মাদারবোর্ড, র্যাম ইত্যাদি ডিভাইসে লাগানো হয়। তিনটি ডেসিম্যাল ডিজিট দ্বারা বিশেষ কোডিং পদ্ধতিতে এই রেজিস্টরগুলির মান প্রকাশ করা হয়। প্রথম ডিজিটে ১ থেকে ৯ এর মধ্যে যে কোন অংক হতে পারে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডিজিটে ০ থেকে ৯ এর মধ্যবর্তী যে কোন অংক হতে পারে। এর প্রথম দুটি ডিজিট ওহমিক মানের প্রথম দুটি অংক প্রকাশ করে। তৃতীয় ডিজিট গুণক রাশি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। চিত্র-ক তে চীপ রেজিস্টরের কোডিং দেখানো হয়েছে। চিত্র-খ তে প্রদর্শিত কোড ৫৬২ এর প্রথম দুটি ডিজিট নিয়ে প্রাপ্ত সংখ্যা ৫৬ কে গুণক রাশির মান ১০২ দ্বারা গুণ করে পাই ৫৬০০। একক অবশ্যই ওহম। অনেক সময় খন্ডিত মান প্রকাশ করার জন্য দ্বিতীয় ডিজিটে একটি R লেখা হয়। চিত্র-গ তে প্রদর্শিত 5R6 এর অর্থ হলো ৫.৬ ওহম। এই হলো তিন ডিজিটের মাধ্যমে কোডিং পদ্ধতি।
যদি কোডে ৪ ডিজিট থাকে তাহলে প্রথম তিন ডিজিট ওহমিক মানের প্রথম তিনটি অংক প্রকাশ করবে এবং চতুর্থ ডিজিটটি গুণক রাশি হিসাবে ব্যবহৃত হবে। বাকী সকল নিয়ম একই।
শূণ্য ওহম চীপ রেজিস্টরঃ
চিত্র-ঘ তে শূণ্য ওহম চীপ রেজিস্টরের প্রতীক দেখানো হয়েছে। একটি H আকৃতির চিহ্ন দ্বারা শূণ্য ওহম চীপ রেজিস্টর বোঝানো হয়।
সূত্রঃ
উচ্চ মাধ্যমিক পদার্থ বিজ্ঞান ২য় পত্র
Basic Electronics Solid State – B. L. Theraja
Basic Electronics – Bernard Grob
Basic Electronics Solid State – B. L. Theraja
Basic Electronics – Bernard Grob
No comments:
Post a Comment