পাওয়ার সাপ্লাইতে ব্যবহৃত ট্রান্সফরমারগুলো পাওয়ার ট্রান্সফরমার নামে পরিচিত। এছাড়া আরও অনেক ধরনের ট্রান্সফরমার হয়ে থাকে, যেমন আই. এফ. ট্রান্সফরমার (IFT), আর. এফ. ট্রান্সফরমার (RFT), হাই ভোল্টেজ / টেনশন ট্রান্সফরমার (HT Transformer) ইত্যাদি। অন্যান্য ট্রান্সফরমারের মতো এতেও দুই বা ততোধিক কয়েল থাকে। অন্যান্য ট্রান্সফরমারের সাথে পাওয়ার ট্রান্সফরমারের কমপক্ষে দুইটা পার্থক্য আছে
প্রথমত: এই দুই বা ততোধিক কয়েলের নির্দিষ্ট প্যাচ (টার্ন) সংখ্যা ও অভ্যন্তরীণ কোরের মাধ্যমে একে অপরের মধ্যে বিদুৎ চৌম্বকীয় আবেশ তৈরি করে ও উচ্চ বিদ্যুৎ কে নিম্ন বা তার বিপরীতে রূপান্তর করতে পারে।
দ্বিতীয়ত: এগুলো তুলোনামূলকভাবে হাই পাওয়ার রেটিং এর হয়ে থাকে
এই ধারাবাহিক লেখার মাধ্যমে আমরা এসি মেইন লাইনে ব্যবহৃত পাওয়ার ট্রান্সফরমার এর কিছু তত্ত্ব ও তথ্য আলোচনা করবো। আমাদের দেশের এসি মেইন সাপ্লাইয়ের প্রতি ফেজ-এ ২২০ ভোল্ট – ৫০ হার্জ এর হয়ে থাকে। এখানে সাপ্লাই ফ্রিকুয়েন্সি খুব গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখতে হবে, একটি নির্দিষ্ট ফ্রিকুয়েন্সির জন্য ডিজাইন করা ট্রান্সফরমার কখনোই ওই ফ্রিকুয়েন্সি অপেক্ষা অন্য কোনো ফ্রিকুয়েন্সিতে ব্যবহার করা উচিৎ নয়।
ট্রান্সফরমারের এক বা একাধিক কয়েলে যখন এসি পাওয়ার ইনপুট দেয়া হয়, তখন কয়েল এবং আয়রণ কোরের চতুর্দিকে ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স উৎপন্ন হয়, যার কারণে অন্যান্য কয়েলে আবেশিত কারেন্টের সৃষ্টি হয়। যে কয়েলগুলোতে পাওয়ার ইনপুট দেয়া হয়, সেগুলো প্রাইমারি, এবং যেগুলো থেকে পাওয়ার আউটপুট নেয়া হয়, সেগুলো সেকেন্ডারি হিসেবে পরিচিত। এই সেকেন্ডারি কয়েলে উৎপন্ন ভোল্টেজ প্রাইমারি বা সাপ্লাই ভোল্টেজের থেকে বেশি (স্টেপ আপ) বা কম (স্টেপ ডাউন) হতে পারে।
প্রত্যেক কয়েলে তারের টার্ন বা প্যাচের সংখ্যা ট্রান্সফরমারের কোরের সাইজের সাথে ব্যাস্তানুপাতিক ভাবে পরিবর্তিত হয়। অর্থাৎ কোর মোটা হলে তারের প্যাচ বা টার্ন সংখ্যা কমে, আর কোর চিকন হলে প্যাচ বাড়ে।
ল্যামিনেটেড কোর কি ও এর প্রয়োজনীয়তা:
প্রাইমারি কয়েলে পাওয়ার ইনপুট দেয়ার ফলে উৎপন্ন ক্রমাগত পরিবর্তনশীল ম্যাগনেটিক ফ্লাক্সের কারণে কোরের চতুর্দিকে জড়ানো কয়েলের পাশাপাশি কোরেও আবেশিত কারেন্টের সৃষ্টি করে। ফলে কোর যদি খুব কম রেজিস্টেন্স (রোধ) বিশিষ্ট একটি মাত্র ধাতব খন্ড হয়, তবে এতে আবেশিত কারেন্টের পরিমান অনেক বেশি হয়। এই আবেশিত কারেন্ট কোনো কাজে লাগানো যায় না, শুধুমাত্র কোর গরম হয়ে পাওয়ার বা শক্তির অপচয় হয়। এই ঘটনাটির আবিষ্কর্তার নামানুসারে একে “এডি কারেন্ট” (Eddy Current) বলা হয়।
এডি কারেন্ট একটি সহনীয়মাত্রায় কমানোর জন্য কোর-কে একটিমাত্র ধাতব খন্ডের পরিবর্তে একাধিক পাতলা ধাতব শীট-এ কাটা হয় এবং প্রত্যেকটি শীট-কে একে অন্যের থেকে ইনসুলেটেড (অপরিবাহী) করে রাখা হয়। এর পরও এডি কারেন্ট পরিবাহিত হয়, কিন্তু কারেন্ট খুবই সংকীর্ণ এরিয়ায় ভাগ হয়ে যাবার ফলে যে পরিমান পাওয়ার অপচয় হয়, তা একটিমাত্র ধাতব খন্ডের তুলনায় অনেক অনেক কম হয়ে থাকে।
ধাতব শীটগুলো একটি থেকে আর একটিকে ইনসুলেটেড করার পদ্ধতিই হলো লেমিনেশন যা বিভিন্নভাবেই করা যায়, যেমন: ধাতবপৃষ্ঠে রাসায়নিক (কেমিক্যাল) ব্যাবহার করে, ভার্নিশ ব্যাবহার করে, খুব পাতলা সিমেন্ট পেপার ব্যাবহার করে।
আকারের দিক থেকে লেমিনেশন প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে:
১. E and I type
২. T and U type
উভয়েই তিন বাহু বিশিষ্ট কোর গঠন করে।
আজ এ পর্যন্তই। পরবর্তী পর্বে দেখবো কিভাবে এই পাওয়ার ট্রান্সফরমার বানাতে হয় ও এর কিছু বাস্তব উদাহরণ। আমরা ৩০০ VA ও ৫০০ VA ট্রান্সফরমার বানানোর কৌশল (প্যাঁচ, কোর এর আকার) ও টিপস নিয়ে আসবো। তাই চোখ রাখুন, সাথে থাকুন।
No comments:
Post a Comment